Domain and Hosting

ভিপিএস হোস্টিং কি? Introduction with VPS

যারা ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করবেন বা করছেন তারা হয়তো VPS Hosting শব্দটার সাথে পরিচিত কিন্তু জানেন না ভিপিএস হোস্টিং কি বা কেন এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ডোমেইন ও হোস্টিং সিরিজে আর্টিকেল আমি হোস্টিং কি সহ এর বিভিন্ন প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে ভিপিএস সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি এই আর্টিকেল থেকে VPS নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন।

ভিপিএস কি? (What is VPS)

ভিপিএস এর পূর্ণরুপ হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (VPS stands from Virtual Private Server) । ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার হলো শেয়ার্ড হোস্টিং ও ডেডিকেডেট হোস্টিং এর মধ্যবর্তী একটি হোস্টিং সলিউশন যেখানে আপনি আপনার ইচ্ছা মতো যে কোন ধরনের ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন স্বাধীন ভাবে হোস্ট করতে পারবেন। একটি ডেডিকেডেট হোস্টিং যে সকল সুবিধা পেয়ে থাকেন তার কাছাকাছি অনেক সুবিধাগুলো VPS Hosting এ পেয়ে যাবেন।

ভিপিএস হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?

এখন আমরা ভিপিএস সম্পর্কে আরো একটু বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো এটি আসলে কি এবং কিভাবে কাজ করে থাকে। আমরা যারা হোস্টিং সার্ভার সম্পর্কে জানি তারা জেনে থাকবেন যে, হোস্টিং সার্ভার একটি বিশেষ ধরনের কম্পিউটার যেটাকে ওয়েবসাইট রাখার জন্য ব্যবহার করার হয়ে থাকে তাই আমরা একে ওয়েব হোস্টিং সার্ভার বলে থাকি।

হোস্টিং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে তার মধ্যে Dedicated Server এক ধরনের হোস্টিং সেবা যা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে থাকে। একটি ডেডিকেডেট সার্ভার কে ভার্চুয়ালাইজেশন টেকনোলজির মাধ্যমে ছোট ছোট অংশে তার রিসোর্স দিয়ে একাধিক ভার্চুয়াল কম্পিউটার বা সার্ভার তৈরি করা হয়ে থাকে।

ধরুন, আপনার একটি ডেডিকেডেট সার্ভার রয়েছে যার কনফিগারেশন নিচের মতঃ
Processor: Intel Core i5 10th gen (Cores-6 & Threads-12)
RAM: 12GB
Storage: 150GB

নোটঃ একটি সার্ভারের কনফিগারেশন এই রকম হয়ে থাকে না। শুধুমাত্র আপনাদেরকে বুঝানো সুবিধার্থে সাধারণ কম্পিউটারের কনফিগারেশন উদাহরণ ব্যবহার করা হয়েছে।

এখন এই সার্ভারটি কে বিভিন্ন ভার্চুয়ালাইজেশন প্রযুক্তি যেমন KVM, Hyper-V, OpenVZ ইত্যাদি ব্যবহার করে হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি গুলো এটি একাধিক ভার্চুয়াল কম্পিউটার বা সার্ভার তৈরি করে থাকে। এটি যদি আমরা সমান রিসোর্স দিয়ে ভাগ করে দুটি সার্ভার ভার্চুয়াল সার্ভার বানায় যার প্রত্যেকটি কনফিগারেশন হবে 2 core processor , 4GB RAM, 50GB স্টোরেজ রয়েছে।

ভার্চুয়ালাইজেশন এর জন্য এই প্রত্যেকটি কম্পিউটার একটি ফিজিক্যাল কম্পিউটারের মতো করে ব্যবহার করা যাবে। যেখানে আপনি নিজের ইচ্ছা মতো অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করে ব্যবহার করে ওয়েব হোস্টিং সার্ভার বানিয়ে যেকোন ধরনের ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করতে পারেন। আশা করি, এই উদাহরণটি থেকে আপনাদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছি ভিপিএস হোস্টিং কি? এবং কিভাবে কাজ করে থাকে।

ভিপিএস হোস্টিংয়ের প্রকারভেদ

ভিপিএস হোস্টিং কে ম্যানেজমেন্টের উপর ভিত্তি করা দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথাঃ-

Major type of VPS Hosting:

  1. Unmanaged VPS Hosting: আনম্যানেজ ভিপিএস হোস্টিং সেবায় আপনার সার্ভারের পুরো নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা আপনার হাতে থাকে। এই হোস্টিং সেবায় আপনাকে একটি ফ্রেশ ভিপিএস দেওয়া হবে যেখানে আপনাকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভিপিএস সার্ভার কনফিগারেশন, ওয়েবসার্ভার ইনস্টল, সফটওয়্যার, ইত্যাদি নিজে থেকে করে নিতে হবে এই কারণে এটি আনম্যানেজড ভিপিএস হোস্টিং বলা হয়ে থাকে।
  2. Managed VPS Hosting: ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে যখন আপনি এই সার্ভিসটি নিবেন তখন আপনাকে বাড়তি কোন কষ্ট করতে হবে না। তারা বিভিন্ন ভাবে আপনার কাছে এই ভিপিএস হোস্টিং টি কনফিগার করে সার্ভিসটি প্রদান করবে। যেমন অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার আছে যারা ভিপিএস সিপ্যানেল ইনস্টল করে দিয়ে দিবে যেন আপনি সহজেই আপনার ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার ভিপিএস হোস্টিং কনফিগার করা, ম্যানেজ করা, সফটওয়্যার ইনস্টল করা,সিকিউরিটি ইত্যাদি হোস্টিং প্রোভাইডার থেকে করে দেওয়া হবে যেকারণে এটিকে ম্যানেজড ভিপিএস হোস্টিং বলা হয়ে থাকে।

আবার অপারেস্টিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে ভিপিএস হোস্টিং দুই প্রকার । যথাঃ

Type of VPS Hosting by Operating System:

  1. Linux VPS Hosting: লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে যে ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার তৈরি করা হয়ে থাকে সেকল VPS কে লিনাক্স ভিপিএস বলা হয়ে থাকে। লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম এর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে সার্ভার কম্পিউটারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বেশির ভাগ সার্ভার লিনাক্স নির্ভরশীল। আপনার প্রজেক্টের উপর ভিত্তি করে আপনি লিনাক্স ভিপিএস হোস্টিং নির্বাচন করতে পারেন।
  2. Windows VPS Hosting: উইন্ডোজ ভিপিএস হোস্টিং হলো মাইক্রোসফটের টেকনোলজি দিয়ে তৈরি করা ওয়েবসাইট গুলো হোস্ট করার জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। তাদের ASP.Net/ .Net Core ইত্যাদি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করার জন্য উইন্ডোজ হোস্টিং ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ উইন্ডোজ সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে যে ভিপিএস দেওয়া হয় সেটি উইন্ডোজ ভিপিএস হোস্টিং ।

ক্লাউড ভিপিএস হোস্টিং (Cloud VPS Hosting)

হোস্টিং এর জগতে আরেক ধরেনের হোস্টিং সার্ভিস বা টার্ম আছে যার নাম হলো Cloud VPS Hosting । এটি অন্যান্য ভিপিএস হোস্টিং সার্ভিসের মতো সুবিধা দিয়ে থাকে কিন্তু এটার ক্ষেত্রে ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডার আপনাকে ঘন্টা ভিত্তিক চার্জ (Pay-as-You-Go) করবে। আপনি কত ঘন্টা ব্যবহার করছেন, কত রিসোর্স ব্যবহার করছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনাকে চার্জ করবে।

আশা করি, ভিপিএস হোস্টিং কি? এর প্রকারভেদ এবং এটি কিভাবে কাজ করে সহজেই বুঝাতে পেরেছি। এরপর আপনাদের মনে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আমি আপনাদের কে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ভিপিএস হোস্টিং এর সুবিধা সমূহ

VPS Hosting ব্যবহার করার অনেক রকম সুবিধা রয়েছে, এই সকল সুবিধা গুলো কিছু সংক্ষিপ্তকারে নিচে আলোচনা করা হলোঃ

কাস্টমাইজেশনঃ ভিপিএস হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছা মতো তার হোস্টিং সার্ভারকে কনফিগার করতে পারেন। নিজের প্রয়োজোনীয় অনুসারে VPS Hosting Provider থেকে আপনি একটি ভার্চুয়াল সার্ভার তৈরি করি সেটি নিজের ইচ্ছা মতো অপারেটিং সিস্টেম, বিভিন্ন সফটওয়্যার বা টেকনোলজি ইউজ করে ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করতে পারবেন।

শেয়ার্ড হোস্টিংয়ে আমরা এই ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে না যার কারণে নিজের ইচ্ছা মতো সার্ভার এনভায়রমেন্ট তৈরি করতে পারি না। শেয়ার্ড হোস্টিংয়ে আগে থেকে যে ধরনের কন্ট্রোল প্যানেল বা সফটওয়্যার দিয়ে থাকে সেটি ব্যবহার করে আমাদের ওয়েবসাইট হোস্ট করতে হয়। এতে কোন জঠিল অ্যাপ্লিকেশনের জন্য যে কনফিগারেশন দরকার পড়ে তা করার সুবিধা থাকে না।

পারফোমেন্সঃ Shared Hosting এর থেকে ভিপিএস হোস্টিং এর পারফোমেন্স কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে এর কারণ হলো শেয়ার্ড হোস্টিং এর মতো একই সার্ভারে অনেক গুলো ওয়েবসাইট হোস্ট করা হয়ে থাকে না। অর্থ্যাৎ একই সার্ভারে থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ওয়েব হোস্টিং সেবা প্রদান করে না যার ফলে আপনার ওয়েবসাইট আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফাস্ট হয়ে থাকে। যেহেতু ভার্চুয়াল সার্ভারটি শুধুমাত্র আপনার জন্য বরাদ্দ করা থাকে তাই আপনি পুরোপুরি ভাবে সার্ভারের সিপিইউ,র‍্যাম, স্টোরেজ ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিজে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু আপনিও চাইলে আপনার সার্ভারের এক বা একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন।

ডেডিকেডেট আইপিঃ প্রত্যেকটি সার্ভারের নির্দিষ্ট আইপি থাকে যেটি ব্যবহার করে ওয়েবসাইট হোস্টিং সম্পর্কিত কাজ সম্পাদন করা হয়ে থাকে। শেয়ার্ড হোস্টিংয়ে এক আইপি বিভিন্ন ওয়েবসাইট হোস্টিং করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে কিন্তু ভিপিএস হোস্টিং সার্ভিসে একটি ডেডিকেডেট আইপি পাবেন যেটি শুধু আপনার ওয়েবসাইট গুলো হোস্ট করার জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।

রুট অ্যাক্সেসঃ আমরা যখন আমাদের সাধারণ কম্পিউটার ইউজ করে থাকি তখন কিন্তু আমাদের একটা ইউজার অ্যাকাউন্ট হয়ে যায় অটোমেটিক বা আমাদের করতে হয়। এই অ্যাকাউন্টটি আমাদের এডমিন অ্যাকাউন্ট হয়ে থাকে যেখান থেকে সব ধরনের কাজ করতে পারি এবং চাইলে নতুন ইউজার তৈরি করে সেটিকে লিমিটেড কিছু অ্যাক্সেস দিয়ে আমাদের কম্পিউটারকে ব্যবহার করতে দিতে পারি। ঠিক তেমনি হোস্টিং সার্ভারে ইউজার থাকে যা আমরা সাধারণ হোস্টিং সেবায় পেয়ে থাকি না। কিন্তু ভিপিএস সার্ভার কিনলে আমরা একটি রুট অ্যাক্সেস অর্থাৎ এডমিন ইউজার পেয়ে থাকি।

রুট অ্যাক্সেস থাকার কারণে আমরা নিজের ইচ্ছা মতো সার্ভারকে কনফিগারেশন বা কাস্টমাইজ করতে পারবো। এছাড়াও ইউজার প্যানেল থেকে আমরা ভিপিএস তৈরি করার সময় নিজের ইচ্ছা মতো অপারেস্টিং সিস্টেম সিলেক্ট করে সেখানে চাইলে আমরা যেকোন ওয়েব সার্ভার, সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবো। আপনি এই Virtual Private Server এ ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য নিজের থেকে প্রয়োজনীয় ওয়েব সার্ভার, ডাটাবেস, প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সহ অন্যান্য টেকনোলজি ইনস্টল করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট আরো সহজ করার জন্য বিভিন্ন কন্ট্রোল প্যানেল যেমন cPanel, CyberPanel, Cloud Panel, Plesk,  aaPanel ইত্যাদি ইনস্টল করতে পারেন। এতে আপনি সহজে প্যারাহীন ভাবে আপনার যেকোন ধরনের ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন।

স্কেলিবিলিটিঃ একটি বিজনেস ওয়েবসাইট হোক বা সাধারণত ওয়েবসাইট সময়ের সাথে সেটির ভিজিটর বাড়তে থাকে তারপর লোড আরো বেশি আসতে থাকে যার কারণে সার্ভার আপগ্রেড করা লাগে যা ভিপিএস হোস্টিং সেবায় অনেকটায় সহজেই আপনি ঝামেলাহীন ভাবে আপনার প্রোভাইডারের কাছে থেকে আপনার ভিপিএস হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেড করে নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ার সাথে সাথে আপনি আপনার সার্ভার সহজেই স্কেল করতে পারবেন।

সিকিউরিটিঃ ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার টি একান্ত আপনার হওয়ার কারণে এইখানে সিকিউরিটি পুরো আপনার হাতে এসে যায়। শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারে থাকা ওয়েবসাইট গুলোর মধ্যে একটি ওয়েবসাইট বেশি ভিজিটর বা অন্য কোন কারণে ডাউন হয়ে গেলে আপনার ওয়েবসাইটও ডাউন হয়ে যাবে। কিন্তু ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারে এমন হওয়ার সুযোগ নেয় যেহেতু এই সার্ভারটি আপনি একান্ত ব্যবহার করছেন এবং অন্য কেউ সহজেই অ্যাক্সেস করতে পারছে না। একটি ভিপিএস সার্ভারে যদি সমস্যা হয় তাহলে আপনার ভিপিএস সার্ভারে সেটির কোন প্রভাব পড়বে না। আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন থাকবে অনেক নিরাপদ।

ভিপিএস হোস্টিংয়ের অসুবিধা সমূহ

  • শেয়ার্ড বা অন্যান্য হোস্টিং সার্ভিসের চেয়ে ভিপিএস হোস্টিংয়ের দাম বেশি হয়ে থাকে। আপনার ওয়েসাইট যদি ছোট হয়ে থাকে যা খুব অল্প রিসোর্স ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে ভিপিএস হোস্টিং কেনা আপনার জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • আপনার যদি টেকনিক্যাল নলেজ ভালো না থাকে তাহলে VPS Hosting ম্যানেজ করা একটু কষ্টকর হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের কাজ বা কনফিগারেশন করার ক্ষেত্রে সার্ভার এডমিনিস্ট্রেশন সম্পর্কিত কাজ না জানলে সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।

আসলে অসুবিধা তেমন আর তেমন কিছু নেই। আপনি চাইলে ইউটিউ বা ব্লগ পড়ে ভিপিএস এর ম্যানেজ করার বেসিক কাজ গুলো শিখতে নিতে পারবেন।

ভিপিএস হোস্টিং কেন ব্যবহার করবেন?

আশা করি, VPS Hosting এর সুবিধা সম্পর্কে জানার পর হয়তো এর ব্যবহার সম্পর্কে অনেকটা ধারণা পেয়ে গেছেন। যে কেন আপনি একটি ভিপিএস হোস্টিং সার্ভিস ব্যবহার করবেন। তবুও নিচে কয়েকটি ভিপিএস হোস্টিং এর সুবিধা সম্পর্কে দেওয়া হলো।

  • শেয়ার্ড হোস্টিং এর তুলনায় ভিপিএস হোস্টিং এর দাম একটু বেশি হয়ে থাকে আর এই দাম দিয়ে যদি আপনি হোস্টিং ক্রয় করতে পারেন তাহলে আপনার জন্য ভিপিএস হোস্টিং পারফেক্ট হবে। যদি আপনার ওয়েবসাইট অলরেডি থাকে যেখানে প্রচুর ভিজিটর আসতেছে অথবা নতুন ওয়েবসাইট করবেন যেখানে ভিজিটর বেশি আসতে পারে বলে ধারণা করছেন তাহলে ভিপিএস হোস্টিং আপনার জন্য একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
  • ভিপিএস হোস্টিংয়ে আপনার ওয়েবসাইট হোস্ট করলে শেয়ার্ড হোস্টিং এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি স্পিড পাবেন যা আপনার ওয়েবসাইটের ইউজার এক্সপ্রিয়েন্স অনেক ভালো করে দিবে। ফাস্ট লোডিং ওয়েবসাইট এসইও তে অনেক সাহায্য করবে। একটি ওয়েবসাইট যত দ্রুত লোড হবে ইউজার ততো দ্রুত নিজের ইনফরমেশন নিতে পারবেন এবং গুগল কে একটি ভালো ফীডব্যাক দিবে যা অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার ওয়েবসাইট কে এগিয়ে রাখবে।
  • অল্প দামে ডেডিকেডেট হোস্টিং সার্ভিসের সুবিধা নিতে চাইলে ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার আপনার পছন্দের একটি অন্যতম কারণ হতে পারে।
  • আপনি চাইলে একটি Virtual Private সার্ভারে এক একাধিক ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারেন যেটি শেয়ার্ড হোস্টিং আমরা একটি নির্দিষ্ট প্যাকেজের উপর ভিত্তি করে হোস্ট করতে পারি। কিন্তু আপনি যেহেতু ঐ সার্ভারের মালিক তাই আপনার হাতে সকল ক্ষমতা আছে আপনার সার্ভারে আপনি কয়টা ওয়েবসাইট হোস্ট করবেন। এইক্ষেত্রে খেয়াল রাখা দরকার শুধু একটি সার্ভারে ওয়েবসাইট হোস্ট করে গেলেই হবে না সার্ভার কনফিগারেশন অনুযায়ী এতো গুলা সাইট নিতে পারবে কিনা সেটি বিবেচনা করবে।
  • আপনার কাছে রুট অ্যাক্সেস থাকার কারণে সহজে ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য ফ্রি বা পেইড বিভিন্ন কন্ট্রোল প্যানেল রয়েছে যেগুলো ইনস্টল করে আপনার ওয়েবসাইট হোস্ট বা ম্যানেজ করতে পারবেন করা সহজতর করতে পারেন।

উপরের কারণ গুলো ছাড়াও আরো অনেক সুবিধা রয়েছে একটি ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার ব্যবহার করার, যা আপনি সার্ভিসটি ব্যহার করলেই বুঝতে পারবেন।

ভিপিএস হোস্টিংয়ের দাম কেমন?

ভিপিএস হোস্টিং এর দাম নির্ভর করে থাকে ভিপিএস কনফিগারেশন ও কোম্পানির উপর। একেক কোম্পানি আপনাকে একেক ভাবে ভিপিএস প্যাকেজ উপস্থাপন করে সুবিধা দিয়ে থাকে তার উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি কোন হোস্টিংয়ের প্রোভাইডারের কাছে থেকে কি কনফিগারেশন ভিপিএস নিচ্ছেন তার উপর দাম নির্ভর করছে। বাংলাদেশী হোস্টিং প্রোভাইডার গুলোতে সাধারণত লো কনফিগারেশনের ভিপিএস হোস্টিং পাওয়া যায় না যা পাওয়া যায় তার দাম অনেক বেশি ও হাইকনফিগারেশনের হয়ে থাকে। যদি আপনি একটি সিঙ্গেল ওয়েবসাইট চালাতে চান যা বিজনেস সাইট না অনেক বেশি রিসোর্স লাগবে না তাহলে এনাদের থেকে না নেওয়া উত্তম। কিন্তু আপনি যদি কোন কোম্পানি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এই বড় সাইজের ভিপিএস হোস্টিং প্ল্যান গুলো ঠিক আছে।

এইক্ষেত্রে আপনি বিদেশী ক্লাউড ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডাদের সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে লো কনফিগারেশন থেকে শুরু করে অনেক হাই কনফিগারেশন ভিপিএস সার্ভার পেয়ে যাবেন। এইখানে আমি লো কনফিগারেশন বলতে বুঝাতে চেয়েছি কম দামে আপনার একটি বা দুইটির বেশি সাইট চালানোর মত ভিপিএস পেয়ে যাবেন। ক্লাউড ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডার গুলোতে গড়ে মিনিমাম মাসে ৫ ডলার থেকে শুরু উপরের দিকের প্ল্যান পাওয়া যায়। অপরদিকে বাংলাদেশি ভিপিএস হোস্টিং অনেক হাই কনফিগারেশন দিয়ে থাকে যেটার ২০০০+ টাকা মাস  থেকে শুধু করে আরো অনেক হতে পারে। আবার তুলনামূলক ভাবে দেখবেন সেম প্যাকেজ আপনি বিদেশী কোম্পানির কাছে এর চেয়ে কম দামে পেয়ে যাচ্ছেন।

অবশ্য শুধু মাত্র দামের সাথে তুলনা করলে হবে আপনি যে সার্ভিস ব্যবহার করছেন সেটার আপটাইম আসলেই ভালো কিনা, আপনি সাপোর্ট যোগাযোগ করলে সঠিক সাহায্য পাবেন কিনা এটি বিবেচনার বিষয়।

ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডার (VPS Hosting Provider)

আমরা সাধারণত যেসব হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং সার্ভিস কিনে থাকি তাদের কাছে থেকেই আমরা VPS Hosting সার্ভিসটি নিতে পারি যদি তারা অফার করে। দেশি বিদেশী অনেক ভিপিএস প্রোভাইডার রয়েছে কিন্তু আপনি কোনটা নিবেন তাই তো? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অনেক ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার রয়েছে যাদের কাছে থেকে আপনি ভিপিএস হোস্টিং কিনতে পারেন। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখেছি বাংলাদেশী হোস্টিং কোম্পনির ভিপিএস প্ল্যান গুলো অনেক হাইকফিগারেশন যা সাধারণ ইউজারদের জন্য কেনা সম্ভব না।

কিন্তু যদি আপনি বা আপনার ডেভেলপার জানেন আপনার ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য মোটামুটি ভালো রিসোর্সের সার্ভার লাগবে তাহলে আপনি সেই অনুযায়ী ভিপিএস কিনতে পারেন। আমি দেশী কোন হোস্টিং প্রোভাইডারের নাম উল্লেখ করছি না আপনারা ইন্টারনেটে সার্চ করে রিভিউ দেখে জেনে নিবেন।

ইন্টারন্যাশনাল ভিপিএস হোস্টিং প্রোভাইডার গুলো মধ্যে জন্যপ্রিয় সার্ভিস গুলো Digital Ocean, Vultr, Linode ইত্যাদি। এই গুলোতে আপনি মাসে ৫ ডলারের বিনিময়ে ভিপিএস কিনতে পারবেন। মূলত এরা Pay as you go সিস্টেমে কাজ করে থাকে। আমি যেমন ডিজিটাল ওশেনের হোস্টিং ব্যবহার করে আসছে এইখানে ঘন্টা ভিত্তিক করে মাসে শেষে একটা অ্যামাউন্ট চার্জ করা হয়ে থাকে। আপনাদের বুঝার সুবিধার জন্য নিচে Digital Ocean প্রাইজিং প্লানের স্ক্রিনশট দিলাম।

Digital Ocean VPS Hosting Pricing

ঠিক এই রকম প্রাইজে Vultr, Linode এরাও ভিপিএস হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে। আপনি যদি ডিজিটাল ওশেনের নতুন ইউজার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এইখানে অ্যাকাউন্ট করলে ২০০ ডলার ক্রেডিট এক মাসের জন্য ফ্রি দিবে যাদ দিয়ে আপনার ইচ্ছা মতো ভিপিএস তৈরি করে টেস্টিং করতে পারেন। আর যদি সার্ভিসটি ভালো লাগে তাহলে তাদের ভিপিএস ব্যবহার করে যেতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি একজন স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন সিএসই বা আইটি নিয়ে পড়াশনা, কাজ করছেন তাহলে গিটহাবের মাধ্যমে এই ২০০ ডলারের ক্রেডিটটি এক বছরের জন্য করে নিতে পারবেন। এই নিয়ে আমি আগে থেকে একটি আর্টিকেল লিখে রেখেছিলাম সেটি দেখে আসতে পারেনঃ গিটহাব স্টুডেন্ট ডেভেলপার প্যাক কি? বিস্তারিত।

Refer Link: Click here to buy Digital Ocean VPS

আশা করি, এই আর্টিকেল আপনারা ভিপিএস সম্পর্কে একটু স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গিয়েছেন যে ভিপিএস কি, ভিপিএস এর ব্যবহার সহ অন্যান্য বিষয়। এছাড়াও যদি আপনাদের মনে কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ নেওয়ার থাকে কমেন্ট করে জানাবেন আমি উত্তর দিবো ইনশাল্লাহ।

অন্যান্য আর্টিকেলঃ

BDIX Web Hosting কি? এটি ব্যবহার সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ।

ওয়ার্ডপ্রেস কি? কিভাবে শিখবেন। ওয়ার্ডপ্রেস টিউটোরিয়াল-১

সিপ্যানেল কি? কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। cPanel Tutorial-1

MD Biplop Hossain

আমি মোঃ বিপ্লব হোসেন। নিজেকে আমি একজন প্রযুক্তি প্রেমী মানুষ হিসাবে পরিচিত দিতে বেশি পছন্দ করি। আমি শিখতে ও শেখাতে পছন্দ করি তাই নিজের এই ছোট্ট ব্লগের মাধ্যমে ইন্টারনেটে বাংলায় প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল উপহার দেওয়ার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমি ফ্রন্টএন্ড ডেভেলপার হিসাবে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!