টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি? ফেসবুক ও জিমেইলে সেটআপ পদ্ধতি।

অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো নিরাপদ রাখার একটি অসাধারণ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো টু স্টেপ ভেরফিকেশন। টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি? এবং এটি কিভাবে কাজ করে এই বিষয় গুলো আজকে আমরা জানবো ও শিখবো। সেই সাথে Two Step Verification চালু করে কিভাবে আমাদের ফেসবুক ও জিমেইল অ্যাকাউন্ট সহ অন্য সব অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারি সেটি করা শিখব।
টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি?
স্টু স্টেপ ভেরিফিকেশন হলো অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলোর নিরাপত্তা প্রদান করার একটি সিস্টেম অর্থাৎ এটি একটি সিকিউরিটি সিস্টেম। আরো ভালো করে বুঝাতে গেলে আমরা যদি ইংরেজি Two Step Verification এই শব্দটির মানে বের করে তাহলে বুঝতে পারবো। এইখানে Two step verification বলতে দুই স্তর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। আমরা যখন কোন একটি ওয়েবসাইট বা সার্ভিস যেমন ধরা যাক ফেসবুকে লগিন করে তখন লগিন করার জন্য আমাদের বেশি কিছু করতে হয় শুধু মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সহজে লগিন করে থাকি।
কিন্তু যখন আমাদের অ্যাকাউন্ট গুলোতে স্টেপ ভেরিফিকেশন সিস্টেম অন থাকে তখন পাসওয়ার্ড দিলেও লগিন করতে পারবো না। পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করার পর আবার আরেকটি উপায়ে যাচাই করবে আসলেই আপনি লগিন করছেন কিনা। যদি আপনি সেই স্তর বা ধাপ টা পারি দিতে পারেন তাহলেই আপনাকে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে দিবে। কিভাবে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কাজ করে সেটি জানতে পরের অংশটুকু পড়তে থাকুন।
আর হ্যাঁ এটাকে Two factor authentication ও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু টু স্টেপ ভেরিফিকেশন শব্দ টা বেশি বলতে দেখা যায়।
Two Step Verification কীভাবে কাজ করে?
সাধারণত যখন আমরা কোন অ্যাকাউন্টে লগিন করতে চাই তখন আমরা একটি ধাপ পার করলেই লগিন করতে পারি। সেটির জন্য আমাদেরকে ইমেইল/নাম্বার/ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগিন করতে হয়। কিন্তু যখন আপনার অ্যাকাউন্টে স্টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সিস্টেমটি অন থাকবে তখন আরেকটি ধাপ যুক্ত হবে আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার জন্য। সাধারণত এই সিস্টেম দ্বিতীয় ধাপে আপনার মোবাইল বা ইমেইল আইডিতে একটি কোড সেন্ড করবে সেটি যখন আপনি প্রবেশ করারবেন তখনই অ্যাকাউন্টে লগিন করতে পারবেন।
এখন একটু ভাবুন যদি আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড যদি কেউ পেয়ে যায় তখন কি হয়? তখন অবশ্যই সে আপনার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে আপনার আইডি থেকে অনেক কিছু হাতিয়ে নিবে। কিন্তু আপনার অ্যাকাউন্টে যদি Two Step অন করা থাকে তাহলে কেউ যদি আপনার পাসওয়ার্ড টি পেয়েও যায় কোন ভাবে তাহলেও সে লগিন করতে পারবে না। কারণ যখন সে আপনার পাসওয়ার্ড পেয়ে লগিন করার চেষ্টা করবে তখন আপনার ইমেইল বা মোবাইল নাম্বারে একটা ভেরিফিকেশন কোড আসবে সেটি দিলে তারপর অ্যাকাউন্ট লগিন করতে পারবে।
যেহেতু আপনার মোবাইল নাম্বার বা ইমেইল আইডির অ্যাক্সেস তার কাছে নেয় সে লগিন করতে ব্যর্থ হবে। এভাবে আপনার অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলো অনেকটা নিরাপদ করা যায়। পাসওয়ার্ড ভুল করে কেউ পেয়ে গেলেও আপনার অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতেও পাবে না কোন তথ্য বা অর্থ হাতিয়ে নিতেও পারবে না। যখন আপনি লগিন করার চেষ্টা করা ছাড়াই কোড আসে তাহলে বুঝবেন কেউ পাসওয়ার্ড জেনে গেছে সাথে সাথে পরিবর্তন করে নিবেন।
স্টু স্টেপ ভেরিফিকেশন সিস্টেম অন থাকার গুরুত্ব
ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা অনেক কিছু করে থাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা, ইমেইল করা, অনলাইন ব্যাংকিং করা, ফ্রিল্যান্সিং করা ইত্যাদি। এইসব সার্ভিস বা কাজের জন্য আমাদের কে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করতে হয় এইগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে যা অন্যের হাতে চলে গেলে অনেক কিছু হারানোর ভয় থাকে। যদি একটি জিমেইল অ্যাকাউন্টের কথা বলি তাহলে বুঝতে পারব অনলাইন অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
একটি জিমেইল বা ইমেইল অ্যাকাউন্ট দ্বারা আমরা আরো অনেক ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট করে থাকি। সেখান থেকে নানা ধরনের ইমেইল আসে তাছাড়াও এইসবে আমাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ছবি ইত্যাদি আপলোড করে থাকি যা অন্যের হাতে গেলে মহা বিপদ। বেশি ভাগ মানুষ তাদের পাসওয়ার্ড খুব দূর্বল ভাবে দেয় যেটা যেখনো সময় ক্রাক বা হ্যাক হতে পারে। আর সেটি হলে আপনার কি অবস্থা হবে সেটি বুঝতেই পারছেন।
এছাড়াও যারা অনলাইন ব্যাংকিং করে বা বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের সাথে জড়িত তাদের ঐসব অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস অন্য জনের হাতে চলে গেলে ব্যালেন্স জিরো করে দিয়ে চলে যাবে। সে জন্য কেউ যদি কখনো পাসওয়ার্ড পেয়েও যায় তাহলে লগিন যেন করতে না পারে তাই টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন রাখার গুরত্ব অপরিসীম।
ফেসবুকে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করার পদ্ধতি
আমি ফেসবুকের অফিশিয়াল অ্যাপ Facebook দ্বারা কিভানবে Two step verification চালু করবেন সেটি দেখাবো। কিন্তু যারা ফেসবুকের Facebook Lite বা ডেস্কটপে ব্যবহার করছেন তারা চিন্তা করবেন নিয়ম একই। এই পদ্ধতিতেই আর সকল মাধ্যমে দ্বারাও এটি অন করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাকঃ
১। প্রথমে আপনার ফেবুক অ্যাপে প্রবেশ করুন তারপর মেনু তে ক্লিক টাপ করুন।
২। Settings & Privacy থেকে Settings এ যান।
৩। Password And Security তে প্রবেশ করুন।
৪। Use Two-factor authentication এ প্রবেশ করুন।
৫। এখানে তিন পদ্ধতি পাবেন টু স্টেপ ভেরিফিকেশন এর জন্য এইখানে থেকে আপনি Text Message(SMS) এটি সিলেক্ট করবেন শুধু তারপর Continue করবেন।
৬। আপনার অ্যাকাউন্টে যদি আগে থেকে নাম্বার এড থাকে তাহলে এইখানে দেখাবে যদি না থাকে এড ফোন নাম্বার করে নিবেন। আমার যেহেতু আগে থেকে এড করা আছে তাই আমি সেটি সিলেক্ট করে Continue করলাম।
৭। এখন আপনি যে নাম্বার টি এইখানে দিয়েছেন সেটিতে ৬ ডিজিটের কোড যাবে সেটা এখানে প্রবেশ করাবেন।
৮। তারপর আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিবেন তাহলে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু হয়ে যাবে।
এর পরবর্তী তে যখন আপনি বা অন্য কেউ নতুন কোন ডিভাইসে লগিন করার চেষ্টা করলে ফেসবুক আপনার মোবাইলে নাম্বারে কোড পাঠাবে সেটি এন্ট্রি করলে তারপরেই যে অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস পাবেন।
নোটঃ অনেক সময় দেখা গেছে আমরা লগিন করছি কিন্তু টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কোড দিচ্ছে না। এইক্ষেত্রে যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যদি আগে থেকে আপনার অ্যাপে বা কোথাও লগিন থাকে তাহলে সেটি তে প্রবেশ করে নোটিফিকেশন চেক করুন। সেখানে একটা নোটিফিকেশন গেছে অ্যাকাউন্ট লগিন করা নিয়ে সেটি থেকে প্রবেশ করে Allow করলে তাহলে কোড ছাড়াই লগিন হয়ে যাবে।
আর যদি কোথাও লগিন না থাকে অনেকক্ষণ হওয়ার পর যদি কোড না আসে তাহলে ইনপুট বক্সের নিচে দেখবেন কোড রিসেন্ড করার অপশন পাবেন তাহলে আশা করি আবার কোড পেয়ে যাবেন।
ফেসবুক রিকভারি কোড (Facebook Recovery Codes)
অনেক সময় দেখা গেছে আমাদের মোবাইল নাম্বার টি আমাদের কাছে থাকে না অথবা চুরি হয়ে গেছে নয়তো কোড রিসিভ হচ্ছে না। মানে ফেসবুক থেকে কোড আসছে না তখন কি করবেন? এর জন্য ফেসবুক সমাধান দিয়ে রাখছে। ফেসবুকের সেটিং থেকে Password and Security> Use Two Factor authentication> Recovery codes ক্লিক করে Show codes টাপ করুন।
তাহলে এই কিছু বিশেষ কোড পাবেন যেগুলো কপি করে এমন একটা সিকিউর জায়গাতে রাখুন যেখান থেকে আবার প্রয়োজন পড়লে নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। যদি আপনার কোন সমস্যা হয় লগিন করতে রিকভারি/ভেরিফিকেশন কোড না আসে এই গুলো ব্যবহার করতে পারবেন। একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে একটি কোড শুধু একবার ব্যবহার করতে পারবেন তারপর সেটি আর ব্যবহার করা যাবে না। পরবর্তী অন্য আরেকটি কোড ব্যবহার করতে হবে। আর সব চেয়ে ভালো হয় যদি এই কোড গুলোর দুই একটা মুখস্ত করে রাখলে।
আশা করি, জেনে গেছেন ফেসবু টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি? কিভাবে ফেসবুকে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করতে হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত কিছু টিপস দিয়েছি যে লগিন করার সময় কোড নিয়ে কোন সমস্যা হলে কিভাবে সমাধান করবেন।
জিমেইলে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করার পদ্ধতি
এখন আপনাদের দেখাব আমাদের গুরুত্বপূর্ণ জিমেইল বা গুগল অ্যাকাউন্ট যায় বলি না কেন সেটি তে কিভাবে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করবেন। এটি অন করার ফলে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টের সিকিউরিটি বেড়ে যাবে। কেউ আপনার জিমেইল এর পাসওয়ার্ড পাইলেও লগিন করতে পারবে না ঠিক ফেসবুকের মতো। তো চলুন শুরু করা যাকঃ
১। প্রথমে আপনার কম্পিউটার যেকোন ব্রাউজার ওপেন করুন যেটাতে আপনার জিমেইল টি লগিন আছে। যারা মোবাইল তারা গুগল ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন কারণ এটিতে আপনার জিমেইল অলরেডি সাইন ইন করা আছে।
২। তারপর গুগল ডট কম এ গিয়ে ম্যানেজ অ্যাকাউন্টে যেতে পারেন অথবা ডাইরেক্ট https://myaccount.google.com/ এই লিংকে যেতে পারেন।
৩। নিচের স্ক্রিনশটের মতো দেখতে পারবেন নিচের মেনু থেকে ডান দিকে swipe করে Security নামের অপশনটি প্রবেশ করুন। এখন 2-Step Verification এ ক্লিক করুন।
৪। Get Started এ প্রবেশ করুন।
৫। এইখানে আপনার জিমেইল অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়ে পরের ধাপে যেতে হবে।
৬। এখন গুগল Show more options থেকে Text message or voice call সিলেক্ট করে Continue করুন।
৭। সব ঠিক ঠাক থাকলে নেক্সট এ ক্লিক করুন এরপর গুগল থেকে আপনার ঐ মোবাইল নাম্বারে ভেরিফিকেশন কোড পাঠাবে।
৮। যে কোড টি পাবেন সেটি এখানে দিয়ে Next করুন।
৯। এখন Turn On করে দিন তাহলে কাজ শেষ।
১০। অপশনটি অন করে দেওয়ার পর একটি পেজে নিয়ে যাবে তারপর নিচের দিকে দেখবেন Recovery Codes আছে ফেসবুকের মতো। এটি ঠিক ফেসবুকের রিকভারির মতো কাজ করবে, কিছু কোড দিবে যেগুলো মোবাইল নাম্বার টা আপনার কাছে না থাকলে কাজে লাগাতে পারবেন।
আশা করি, আপনারা শিখে গেছেন টু স্টেপ ভেরিফিকেশন কি? কিভাবে ফেসবুকে টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করতে হয়, কিভাবে জিমেইল টু স্টেপ ভেরিফিকেশন অন করতে হয়। আশা করি এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আপনাদের অ্যাকাউন্ট গুলো কে আরো সুরক্ষিত করবে।
ধন্যবাদ
আরো পড়ুনঃ
ধন্যবাদ এত সুন্দর আর্টিকেল আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।